পবিত্র কোরআনে ৬৬৬৬টি আয়াতের মধ্যে সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতপূর্ণ আয়াত বলা হয় সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতকে। এই আয়াতকে আয়াতুল কুরসি নামে ডাকা হয়। আয়াতুল কুরসি ডাকার কারন এই ছোট্ট আয়াতে আল্লাহতায়ালা নিজের পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি করা সর্বপ্রথম ৪টি সৃ্ষ্টির একটি কুরসির কথা এই আয়াতে বলেছেন।
এটি মর্যাদার দিক থেকে পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ আয়াত। বিভিন্ন হাদিসে এই আয়াতের অত্যাধিক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।
হযরত উবাই বিন কা’ব (রাযিঃ) বর্ননা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরশাদ করিয়াছেন, হে আবুল মুনাজির ! ইহা হযরত উবাই বিন কাব (রাযিঃ) এর উপনাম। তোমার জানা আছে কি, তোমার নিকট কিতাবুল্লার সর্বাপেক্ষা মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত কোনটি?
আমি আরজ করলাম আল্লাহ ও তার রাসূল-ই সর্বাপেক্ষা বেশুই জানেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, আবুল মুনাজির! তোমার জানা আছে কি, কিতাবুল্লাহর সর্বাপেক্ষা মর্যাদাসম্পন্ন তোমার নিকট কোনটি? আমি আরজ করলাম, اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّ (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়্যূল কাইয়্যূম) [আয়াতুল কুরসী]।
তিনি আমার সিনার উপর হাত মারিলেন (যেন এইরূপ উত্তরের কারনে সাবাশ দিলেন) এবং এরশাদ করিলেন, হে আবুল মুনযির ! তোমার জন্য এলেম মোবারক হউক। [সহীহ মুসলিম]
আয়াতুল কুরসি আরবি | Ayatul Kursi Arabic
اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَـىُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَـــُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الْعَلِىُّ الْعَظِيْمُ-
আয়াতুল কুরসি আরবিতে ছবি | Ayatul Kursi Arabic Photo
আয়াতুল কুরসি বাংলা | Ayatul Kursi Bangla
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
আয়াতুল কুরসি বাংলা ছবি | Ayatul Kursi Bangla Photo
আয়াতুল কুরসি ফযিলত
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক জিনিসের চূড়া থাকে, কুরআনে কারীমের চূড়া হলো সুরা বাকারাহ। সেখানে একটি আয়াত আছে যা কুরআনের সমস্ত আয়াতের মর্যাদার। আর সেটা হলো আয়াতুল কুরসি। (তিরমিযী)
১. আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না।(নাসায়ী)
২. হযরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মিম্বরের কাঠের উপর বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশির ঘর এবং আশপাশের আরো অন্যান্য ঘরসহ নিরাপত্তা দান করবেন।(সুনানে বায়হাকী)
৩. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
৪. যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। (বোখারি, হাদিস ২৩১১)।
৫. যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত জীন জাতীদের অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকবে, আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত জীন জাতীদের অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকবে। (ইবনে হিব্বান : ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২০৬৪)
৬. এক রেওয়াতে আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে এরশাদ করিয়াছেন, সেই পাক জাতের কছম, যাহার হাতে আমার প্রান, এই আয়াতের একটি জিহ্বা ও দুইটি ঠোট রহিয়াছে, ইহা আরশের পায়ার নিকট আল্লাহ্ তায়ালার পবিত্রতা বয়ান করে। (মুসনাদে আহমদ, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)
আয়াতুল কুরসি তাৎপর্য
হযরত আলী(রাঃ) বলেছেন, আমি মনে করি না যে, এমন কোন ব্যক্তি যে জন্মগতভাবে মুসলিম হয়েছে বা সাবালক হওয়ার পর মুসলমান হয়েছে আর সে এই আয়াত اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَـىُّ الْقَيُّوْمُ পাঠ না করে রাত অতিবাহিত করতে পারে।হায়, যদি তোমরা জানতে, এই আয়াতের মর্তবা কি !
তোমাদের নবীকে এই আয়াত আরশের নিচে অবস্থিত খাজানা বা ভান্ডার হইতে দান করা হয়েছে এবং তোমাদের নবীর পূর্বে অন্য কোন এটা দেওয়া হয় নাই। আমি এই আয়াত প্রতি রাত্রে তিনবার পড়ে ঘুমাই। এশার পরে দুই রাকাতে ও বিতরের নামাজেও এটা পড়ি এবং বিছানায় ঘুমানোর আগেও পড়ি। (কানয)