Sura Nas Bangla | সূরা নাস বাংলা অনুবাদ,অর্থ,ফযিলত ও গুরুত্ব

মহান আল্লাহতায়ালার রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিন-শয়তান এবং মানুষ-শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য যে সূরা শিক্ষা দিয়েছেন সেটি হলো সূরা নাস। কোরআনে কারীমের সর্বশেষ সূরা হলো সূরা আন-নাস(মানবজাতি)। সূরা নাসের আয়াত সংখ্যা ৬, আর এই ৬টি আয়াত দ্বারা মানুষের সাথে থেকে কুমন্ত্রণা দেওয়া শয়তানের,জিন-শয়তান ও মানুষ-শয়তানের অনিষ্ট থেকে মানবজাতির রব, বিশ্ব জগত্বের অধিপতি, সবোর্ত্তম রবের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন।

রসূল (সাঃ) বলেছেন, ”তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ আপনার সাথেও? তিনি বললেন, হ্যা তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভালো কাজের কথাই বলে।(মুসলিম:২৮১৪)।

 

সূরা নাস বাংলা অডিও | Sura Nas Bangla Audio

সূরা নাস লেখা, উচ্চারণ ও অনুবাদ

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

 

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

  • কুল আউযু বিরাব্বিন নাস

 

  • বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,

 

مَلِكِ النَّاسِ

 

  • মালিকিন্ নাস

 

  • মানুষের অধিপতির।

 

إِلَهِ النَّاسِ

 

  • ইলাহিন্ নাস

 

  • মানুষের মা’বুদের।

 

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

 

  • মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস

 

  • তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,

 

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

 

  • আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস

 

  • যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।

 

مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

 

  • মিনা জিন্নাতি ওয়ান্নাস

 

  • জিনের মধ্যে থেকে এবং মানুষের মধ্যে থেকে।

সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ ছবি | Sura Nas Bangla Photo


সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ ছবি


সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ ছবি

সূরা নাস বাংলা পিডিএফ  Surah Nas Bangla Pdf

Download Surah Nas Bangla PDF>>>

সূরা নাসের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কিত হাদিস সমূহ

 

  • প্রতি রাতে নবী (সাঃ) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে দু’হাতে একত্র করে হাতে ফুক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীর হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তার দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরুপ করতেন।

 

  • আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে সূরা নাস ও সূরা ফালাক পড়ে ডান হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন এবং পড়তেনঃ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী, তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দাও, যা কোন রোগ অবশিষ্ট থাকে না। সুফইয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি এ সম্বন্ধে মানসূরকে বলেছি। তারপর ইবরাহীম সূত্রে মাসরূকের বরাতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণিত আছে (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১৯)

 

  • আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সহিহ হাদিস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে মারা যান, সে রোগে তিনি সূরা নাস ও সূরা ফালাক্ব পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন রোগ বেড়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাত বুলিয়ে দিতাম বারাকাতের আশায়।

বর্ণনাকারী [মা’মার (রহঃ)] বলেন, আমি ইবনু শিহাবকে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কীভাবে ফুঁক দিতেন? তিনি বললেনঃ নিজের দু’হাতে ফুঁক দিতেন, তারপর তা দিয়ে চেহারা মুছে নিতেন (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৭)

 

  • উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে পেছনে চললাম। তখন তিনি ছিলেন আরোহী। আমি তাঁর পায়ে হাত রেখে বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সূরা হুদ এবং সূরা ইউসুফ পড়িয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি সূরা নাস ও সূরা ফালাক অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাশীল কোন কিছুই পাঠ করবে না

 

  • সহিহ হাদিস উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজ রাতে আমার উপর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছে। তার ন্যায় আর কোন আয়াতই দেখা যায়নি। তা হলো সূরা ফালাক এবং সূরা নাস

 

  • সহিহ হাদিস উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তে আদেশ করেছেন

 

  • সহিহ হাদিস উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সূরা নাস ও ফালাক সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এই দুটি সূরা দ্বারাই আমাদের ফজরের সালাতে ইমামতি করেন

 

  • হাসান হাদিস উক্ববা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সওয়ারীর রশি টেনে নিচ্ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেনঃ হে উক্‌বা! তুমি সওয়ার হবে না? আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য তাঁর বাহনে আরোহণ সমীচীন মনে করলাম না।

কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বললেনঃ হে উক্ববা ! তুমি কি সওয়ার হবে না? তখন আমি আশংকাবোধ করলাম যে, আদেশ অমান্য করার অপরাধ হয়ে যায় কিনা। সুতরাং তিনি অবতরণ করলে আমি সওয়ার হলাম। কিছুক্ষণ পরে আমি নিচে নামলাম, আর তিনি সওয়ার হলেন।এরপর তিনি বললেনঃ মানুষ যা তিলাওয়াত করে, এমন দু’টি উত্তম সূরা আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না? এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দুটি সূরা- কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও সূরা নাস শিক্ষা দিলেন।

এমন সময় সালাতের ইকামত বলা হলো এবং তিনি অগ্রসর হয়ে এ দু’টি সূরাই পড়লেন, পরে তিনি আমার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে উক্‌বা! কিরূপ দেখলে? তুমি প্রত্যেক শয়নে ও জাগরণে এ সূরা দু’টি পাঠ করবে

 

  • আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সহিহ হাদিস রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনের কুদৃষ্টি এবং মানুষের কুদৃষ্টি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরে যখন সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হলো, তখন তিনি ঐ সূরাদ্বয় পড়া আরম্ভ করলেন এবং অন্যগুলো পরিত্যাগ করলেন

 

  • সহিহ হাদিস i আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্বিন ও মানুষের কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫১১)

Leave a Comment